ওয়েব ডেস্ক, ৩০ জুন: হৃদরোগ চিকিৎসায় এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করল মণিপাল হাসপাতাল, সল্টলেক। মণিপাল হসপিটালস নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত এই হাসপাতাল প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক ‘অর্বিটাল অ্যাথারেকটমি’ পদ্ধতির সাহায্যে একজন জটিল হৃদরোগীকে সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসা করল।
এই বিশেষ পদ্ধতিটি করেন ডঃ (প্রফেসর) পার্থসারথি ব্যানার্জী এবং ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে, দুইজনই মণিপাল হাসপাতাল সল্টলেক-এর অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
রোগী ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ (নাম গোপন রাখা হয়েছে), যিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এনজিওপ্লাস্টি করিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু মাসের মধ্যেই হালকা চলাফেরাতেও তাঁর বুক ধড়ফড় ও ব্যথা শুরু হয়।
চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানোর পর, তাঁর হার্টের অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে চিকিৎসকরা তিনটি নতুন ব্লকেজ খুঁজে পান। প্রথম ব্লকটি ছিল বাম অ্যান্টেরিয়র ডিজেন্ডিং আর্টারি (এলএডি)-তে, যেটি হার্টের সামনের দিকে রক্ত সরবরাহ করে। দ্বিতীয় ব্লকটি ছিল বাম সার্কামফ্লেক্স আর্টারি (এলসিএক্স)-তে, যেটি হার্টের পাশ ও পিছনের অংশে রক্ত দেয়। তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুতর ব্লকটি ছিল ডান করোনারি আর্টারি (আরসিএ)-তে, যেটি হার্টের নিচের ও ডান পাশে অক্সিজেন সরবরাহ করে।আরসিএ-তে ব্লকেজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং পাথরের মতো শক্ত ক্যালসিয়ামে তৈরি, যেটা সাধারণ এনজিওপ্লাস্টি যন্ত্রে খোলা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দিলেও, রোগী তা নিতে চাননি।
এরপর, প্রথম দিনে এলএডি এবং এলসিএক্স আর্টারির ব্লক দুটিতে সফলভাবে এনজিওপ্লাস্টি করা হয়। দ্বিতীয় দিনে চিকিৎসকরা ‘অর্বিটাল অ্যাথারেকটমি’ নামক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন আরসিএ ব্লকেজ খোলার জন্য। এই পদ্ধতিতে হীরার ডগাযুক্ত একটি যন্ত্র অনেক দ্রুত ঘোরে এবং ব্লকেজের ভিতরে জমে থাকা ক্যালসিয়াম ভেঙে ফেলে। এরপর সেখানে তিনটি স্টেন্ট বসানো হয় এবং সম্পূর্ণ রক্তপ্রবাহ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। রোগী স্থিতিশীল ছিলেন এবং আইসিইউ-তে ভালোভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ডঃ (প্রফেসর) পার্থসারথি ব্যানার্জী বলেন, “এই পদ্ধতিটি শুধু চিকিৎসার জন্য জরুরি ছিল না, বরং রোগীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটি আধুনিক সিদ্ধান্ত। আজকের দিনে আমাদের এমন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরাও নিরাপদে সুস্থ হতে পারেন।”
ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে বলেন, “এই রোগীর ডান দিকের আর্টারিতে ব্লকেজটি এতটাই শক্ত ছিল যে সাধারণ পদ্ধতিতে কিছুই করা যাচ্ছিল না। অর্বিটাল অ্যাথারেকটমি আমাদের সেই ক্যালসিয়াম ভেঙে আর্টারিকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। এর ফলে আমরা স্টেন্ট বসাতে পারি এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এটি ভবিষ্যতে এই ধরনের জটিল কেস সামলাতে আমাদের অনেক সাহায্য করবে।”
0 Comments