মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুরে যুগান্তকারী হাঁটু অস্ত্রোপচার, হুইলচেয়ার ছাড়লেন বাংলাদেশের রোগী




ওয়েব ডেস্ক; ২৫ জুলাই: বহু বছর ধরে তীব্র হাঁটুর ব্যথায় হুইলচেয়ার-নির্ভর হয়ে পড়া ৬৬ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি মহিলা রোগীর জীবনে নতুন আশা ফিরিয়ে আনল মণিপাল হাসপাতাল, মুকুন্দপুর। ডা. সুতনু হাজরা, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান – অস্থি বিভাগ, মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুরের তত্ত্বাবধানে সফলভাবে করা হয় তার উভয় হাঁটু প্রতিস্থাপন (বাইল্যাটারাল টোটাল নিও রিপ্লেসমেন্ট) অস্ত্রোপচার।

রোগী শ্রীমা (নাম পরিবর্তিত) বহু বছর ধরে হাঁটুর তীব্র যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, যার ফলে তিনি চলাফেরায় সম্পূর্ণভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিজে থেকেই ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইনকিলার খেতে থাকেন, যার ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে তার কিডনির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হাঁটু প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার দুটি ধাপে – ১লা ও ৩রা জুলাই – সম্পন্ন হয়। যেহেতু রোগীর কিডনির সমস্যা ছিল, তাই অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন তার কিডনির কার্যকারিতা স্থিতিশীল রাখতে চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডা. ঋতেশ কৌন্তিয়া, কনসালট্যান্ট – নেফ্রোলজি ও ট্রান্সপ্লান্ট ফিজিশিয়ান, যিনি অ্যানেসথেশিয়া ও পরবর্তী যত্নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে চিকিৎসা পরিচালনা করেন।

জটিলতায় ভরা এই কেস সত্ত্বেও অস্ত্রোপচার অত্যন্ত সফল হয়। আশ্চর্যের বিষয়, অস্ত্রোপচারের পরের দিনই রোগী ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটতে সক্ষম হন – যা তিনি বহু বছর ধরে করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ডা. ঋতেশ কৌন্তিয়া বলেন, “ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইনকিলার ও বিকল্প ওষুধ অনেক সময় কিডনির মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন এই রোগী হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আমার কাছে আসেন, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে প্রথমে তার হাঁটুর অস্ত্রোপচার করানো প্রয়োজন যাতে ব্যথা ও চলাফেরার সমস্যা দূর হয়। এতে ভবিষ্যতে পেইনকিলার গ্রহণের সম্ভাবনাও কমবে এবং প্রতিস্থাপিত কিডনির নিরাপত্তা বজায় থাকবে।”

ডা. সুতনু হাজরা বলেন, “এই রোগীর কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে হাঁটু বা জয়েন্টের ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে, কিন্তু নিজের মত করে দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক খেলে তা কিডনি, হার্ট ও পরিপাকতন্ত্রের উপর অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। এই রোগীর ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। শুরুতেই যদি অস্থি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো কিডনি বিকল হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছাতেন না। একটানা ব্যথা অবহেলা করা উচিত নয় এবং শুধুমাত্র ফার্মেসি-ভিত্তিক চিকিৎসার উপর নির্ভর করাও বিপজ্জনক। সময়মতো অস্থি চিকিৎসা নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বহু বছরের পর আবার যখন তাকে হাঁটতে দেখি, সেটা আমাদের জন্য এক অনন্য তৃপ্তির মুহূর্ত।”

Post a Comment

0 Comments