২৬ এপ্রিল কলকাতা: মণিপাল হাসপাতালের “মণিপাল অর্গান শেয়ারিং অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট” (MOST) তাদের ‘ডিসিজড অর্গান ও টিস্যু দান’ কর্মসূচির পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শুভ উদ্বোধন করল মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল (মণিপাল হাসপাতাল নেটওয়ার্কের একটি ইউনিট)-এ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথি ও দেশের নামী চিকিৎসকগণ, যেমন প্রফেসর (ডাঃ) মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় (ডিরেক্টর, ROTTO এবং IPGMER), প্রফেসর (ডাঃ) অনিরুদ্ধ নিয়োগী (নোডাল অফিসার, SOTTO – স্বাস্থ্য ভবন), প্রফেসর (ডাঃ) দেবাংশু সরকার (যৌথ পরিচালক, ROTTO), ডাঃ (কল) অবনীশ শেঠ (VSM, কান্ট্রি হেড, MOST), ডাঃ অর্পিতা রায় চৌধুরী (লাহিড়ী) (সিনিয়র কনসালট্যান্ট – নেফ্রোলজি ও ট্রান্সপ্লান্ট, সভাপতি – ISOT), ডাঃ সুগত চক্রবর্তী (রিজিওনাল হেড – মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মণিপাল হাসপাতাল – পূর্ব) এবং ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত (রিজিওনাল COO, মণিপাল হাসপাতাল – পূর্ব)। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের স্বনামধন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, যা এই উদ্যোগের প্রতি সম্মিলিত সমর্থনের বার্তা বহন করে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পরেও ভারতে এখনও অঙ্গদানের প্রয়োজনে দৈনিক প্রায় ৬,০০০ মানুষ প্রাণ হারান। জীবিত দাতাদের মাধ্যমে কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপনে কিছুটা অগ্রগতি হলেও, হার্ট ও ফুসফুসের মতো অঙ্গগুলি শুধুমাত্র ব্রেন-ডেথ অবস্থায় পাওয়া সম্ভব, যার সচেতনতা এবং সম্মতির হার অত্যন্ত কম। প্রতিবছর শুধুমাত্র হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য ৭০০০–৮০০০ রোগী উপকৃত হতে পারেন, অথচ সার্জারির সংখ্যা ৪০০-র নিচে। পূর্বাঞ্চলে এই বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী অগ্রগতি দেখা যায়নি, সেক্ষেত্রে MOST-এর মতো উদ্যোগগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ROTTO-এর ডিরেক্টর প্রফেসর (ডাঃ) মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মণিপাল গ্রুপের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। ২০১৮ সালের পর অঙ্গদানে প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে, আর কোভিড পরিস্থিতি সেই ধাক্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। এই ক্ষেত্রে ICU ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডাক্তারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ROTTO এখন চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও মানসিক সহায়তার দিকে মনোনিবেশ করছে, যাতে পরিবারগুলোর সঙ্গে মানবিক ও স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। কর্পোরেট হাসপাতালগুলোর সমন্বয়ে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
ডাঃ অর্পিতা রায় চৌধুরী (লাহিড়ী) বলেন, “MOST-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সূচনা একটি মাইলফলক। অঙ্গদানের আলোচনা এখন স্বাভাবিক করে তোলা দরকার, চিকিৎসকদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও। বিশ্বাস গড়ে তোলা, পরিবারকে সংবেদনশীল করা এবং হাসপাতালসমূহের মধ্যে সমন্বয়—এই তিনটি স্তম্ভকে ভিত্তি করেই আমরা এগোতে চাই।”
ডাঃ সুগত চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিটি ১৭ মিনিটে একজন মানুষ প্রতীক্ষায় মারা যান। প্রতিটি ১৩ মিনিটে কেউ না কেউ অপেক্ষমাণ তালিকায় যুক্ত হন। অথচ মৃতদেহ থেকে অঙ্গদান এখনো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় না। আমরা চাই, এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি সহানুভূতিশীল, স্বচ্ছ এবং শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি করতে, যা পরিবারগুলিকে সাহায্য করবে ও রোগীদের দ্বিতীয় জীবন দেবে।”
ডাঃ (কল) অবনীশ শেঠ জানান, “গত দুই দশকে দেশের বিভিন্ন অংশের মিলিত প্রয়াসে আজ ভারত অঙ্গ প্রতিস্থাপনে বিশ্বে ৩য় এবং মৃতদেহ থেকে অঙ্গদানে ৮ম স্থানে রয়েছে। তবে এটি কয়েকটি রাজ্য ও হাসপাতালের প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। এখন সময় এসেছে অঙ্গদানকে প্রত্যেক রাজ্যে এন্ড-অফ-লাইফ কেয়ারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করার। MOST-এর লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সমস্ত অংশে উৎকৃষ্ট চর্চা পৌঁছে দেওয়া।”
ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, “আমরা আনন্দিত যে MOST-র দৃষ্টিভঙ্গি এবার পূর্বাঞ্চলেও বাস্তবায়িত হচ্ছে। ICU ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ, গণমাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জেলা ও ছোট শহরগুলিতে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা চাই স্কুল পাঠ্যক্রমে অঙ্গদান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হোক ও অঙ্গদাতাদের পরিবারকে সম্মানিত করা হোক।”
0 Comments