৭০ শতাংশ ভারতীয় দৈনিক ফাইবার গ্রহণের ঘাটতিতে ভোগেন: রিপোর্ট




ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ১ জুন : বিশ্ব পরিপাক দিবসে, ‘আশীর্বাদ হ্যাপি টামি’ প্ল্যাটফর্ম দেশের হজম স্বাস্থ্য নিয়ে একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে, যা ৮ লাখ এরও বেশি অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে তৈরি। এর মধ্যে ফাইবার মিটার-এ ১.২৭ লাখ এর বেশি এবং হ্যাপি টামিতে ডাইজেস্টিভ কশেন্ট-এ ৭.৪০ লাখ এরও বেশি মানুষ তাদের তথ্য প্রদান করেছেন। ‘আশীর্বাদ হ্যাপি টামি’ একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা ‘আশীর্বাদ মাল্টিগ্রেইন আটা’ -র উদ্যোগে পরিচালিত হয় এবং হজম স্বাস্থ্য ও ফাইবার গ্রহণ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।

‘ফাইবার মিটার’ রিপোর্টে দেখা গেছে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭০ শতাংশ ভারতীয় দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ফাইবারের পরিমাণ গ্রহণ করেন না। এই ঘাটতি নারীদের মধ্যে আরও বেশি—৭৪ শতাংশ নারী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফাইবার গ্রহণ করছেন না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই সংখ্যা ৬৪ শতাংশ। এই তথ্য দেখায়, অধিকাংশ মানুষই হজম স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উপেক্ষা করছেন। গবেষণা অনুযায়ী, কম ফাইবার গ্রহণের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা সাধারণ হজম সমস্যা এবং স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে।

অতিরিক্ত অনুসন্ধানগুলি দেখায় যে ভারতীয়রা হজম স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিচ্ছে:

৭৮ সতংস তাদের প্রতিদিনের ফাইবারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অজানা
৭৪ শতাংশ প্রতিদিন মাল্টিগ্রেন গ্রহণ করেন না 
৬৯ শতাংশ দিনে ৮ গ্লাসের কম জল পান করেন
৪৬ শতাংশ প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান
৬০ শতাংশ দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
* হ্যাপি টামির ডাইজেস্টিভ কোশেন্ট টেস্ট থেকে রেকর্ড করা হয়েছে

হজম স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে, ড. বি এস রামকৃষ্ণ, ডিরেক্টর ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট - মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, এসআরএম ইনস্টিটিউটস ফর মেডিকেল সায়েন্স, চেন্নাই বলেন, “হজমতন্ত্র ও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভূমিকা বহু দীর্ঘস্থায়ী রোগের সৃষ্টি ও স্থায়িত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ বারবার দেখিয়েছে যে সম্পূর্ণ শস্য ও মাল্টিগ্রেইন উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্য ফাইবার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সামগ্রিক হজম স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক। 2025 সালের বিশ্ব পরিপাক দিবসে ‘পুষ্ট থেকে সুস্থ’ থিম অনুসারে, ফাইবার-সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাসকে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য কৌশলের মূল ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরা জরুরি, যাতে অপুষ্টি ও দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগের দ্বৈত বোঝা মোকাবিলা করা যায়।”

এই প্রসঙ্গে আইটিসি ফুডস-এর চিফ অপারেটিং অফিসার - স্টেপলস অ্যান্ড অ্যাডজাসেন্সিস, মিস্টার অনুজ রুস্তাগী বলেন, “আমাদের হজম স্বাস্থ্যের জন্য ফাইবার একটি মৌলিক স্তম্ভ, তবুও অধিকাংশ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বেশিরভাগ মানুষই ফাইবারের ভূমিকাকে অবমূল্যায়ন করেন, যা হজমতন্ত্রের জন্য একটি প্রাকৃতিক মহৌষধের মতো কাজ করে। সমীক্ষাটি ভারতীয় খাদ্যে ফাইবারের গুরুতর অভাবকে তুলে ধরেছে, যা জরুরি ভিত্তিতে সংশোধন করা প্রয়োজন। সাধারণ পরিবর্তন—যেমন মাল্টিগ্রেন, সবজি, ফল এবং পর্যাপ্ত জল পান করা—হজম স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।”

খাদ্য এবং হজম স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল দিল্লির প্রধান ডায়েটিশিয়ান, মিসেস অনিতা যতানা বলেন, “হজম সংক্রান্ত সমস্যার বৃদ্ধি মূলত দুর্বল খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণে ঘটে। বিভিন্ন ধরণের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, বিশেষ করে আস্ত শস্য, ডাল, ফল, সবজি গ্রহণ করা সর্বোত্তম হজম স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এই খাবারগুলি প্রাকৃতিকভাবে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যার মধ্যে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইটোকেমিক্যালস অন্তর্ভুক্ত, যা সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতায় অবদান রাখে। পরিশোধিত শস্যের পরিবর্তে হোল গ্রেন আটা, ওটস এবং বাজরার মতো মাল্টিগ্রেন প্রতিদিনের খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সুষম খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ এবং ফাইবার গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক ঘুম, হাইড্রেশন, শারীরিক কার্যকলাপ এবং বিশ্রাম হজম স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে।”

এই ফলাফলগুলি ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের শুরুর মধ্যে আশীর্বাদ হ্যাপি টামি প্ল্যাটফর্মে ভারতজুড়ে অংশগ্রহণ-কারীদের দ্বারা জমা দেওয়া স্ব-প্রতিবেদিত প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

Post a Comment

0 Comments