পাঁচ মাসের শিশুর কিডনি বাঁচাতে মুকুন্দপুরের মণিপাল হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচার




ওয়েব ডেস্ক; ৫ আগস্ট , কলকাতা: নদিয়া জেলার নবদ্বীপের পাঁচ মাসের একটি শিশু, আয়ুষ সেন (নাম পরিবর্তিত), মুকুন্দপুরের মণিপাল হাসপাতালে সফলভাবে একটি ল্যাপারোস্কোপিক পাইলোপ্লাস্টি (keyhole surgery) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই সংবেদনশীল অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন মণিপাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিক সার্জন, ডা. শুভাশিস সাহা।

শিশুটি জন্মগত হাইড্রোনেফ্রোসিসে আক্রান্ত ছিল, একটি অবস্থা যেখানে প্রস্রাবের সঠিক প্রবাহে বাধা থাকায় কিডনি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। আয়ুষের সমস্যাটি গর্ভকালীন স্ক্যানে ধরা পড়ে। মাত্র পাঁচ মাস বয়সেই তার কিডনির কার্যক্ষমতা ২০ শতাংশ কমে যায়। তার বাবা বিজয় সেন (নাম পরিবর্তিত), পেশায় গাড়িচালক, ও মা রোমা সেন (নাম পরিবর্তিত), গৃহবধূ—বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও সন্তোষজনক চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না। অধিকাংশ চিকিৎসকই বলেছিলেন, শিশুটি আরও বড় হলে তবেই অস্ত্রোপচার করা যাবে।
ডা. ললিত কুমার আগরওয়াল (নেফ্রোলজিস্ট) যখন এই কেসটি ডা. শুভাশিস সাহার কাছে রেফার করেন, তখন তিনি সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সময় নষ্ট না করে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। ২৯ জুলাই, মাত্র একটি ৫ মিমি এবং দুটি ৩ মিমি 
কেটে আয়ুষের ল্যাপারোস্কোপিক পাইলোপ্লাস্টি সম্পন্ন হয়। সার্জারির পর শিশুটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয়, তার পেটে কোনও দৃশ্যমান দাগও পড়েনি।

ডা. শুভাশিস সাহা বলেন, “অনেক সময় গর্ভাবস্থার আল্ট্রাসাউন্ডে ধরা পড়া কিডনির ফোলাভাব আপনা-আপনিই ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্লকেজ থাকে, যা অপারেশন না করলে ভবিষ্যতে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। আয়ুষের ক্ষেত্রে, কিডনি ও ইউরেটারের সংযোগস্থলে একটি প্রকৃত বাধা ছিল। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সার্জারি এখন সাধারণ হলেও, এক বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক পাইলোপ্লাস্টি এখনও খুবই বিরল, বিশেষত পূর্ব ভারতে। আমরা মণিপাল মুকুন্দপুরে ২০২১ সাল থেকে সাতটি ইনফ্যান্ট কেস এবং ২০১৩ সাল থেকে ১–১৬ বছর বয়সী প্রায় ৭০টি ল্যাপারোস্কোপিক পাইলোপ্লাস্টি সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এর সুবিধাগুলি হল—কম ব্যথা, দ্রুত আরোগ্য, দৃশ্যমান কোনও দাগ না থাকা এবং সবচেয়ে বড় কথা, সময়মতো কিডনির কার্যক্ষমতা রক্ষা।”

শিশুটির বাবা বিজয় সেন বলেন, “আমরা বহু জায়গায় ঘুরেছি, কেউই আমাদের ঠিকভাবে কিছু বলেনি। এমনকি কেউ একজন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের কথাও বলেছিলেন। মুকুন্দপুরের মণিপাল হাসপাতালে এসে ডা. সাহার সঙ্গে দেখা হলে, তিনি আমাদের সবকিছু স্পষ্টভাবে বোঝান এবং আশ্বস্ত করেন যে ছোট একটি  (keyhole) সার্জারিতেই আমাদের সন্তানের কিডনি বাঁচানো সম্ভব। এখন আমার ছেলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। ডা. সাহা ও তার টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

Post a Comment

0 Comments