ওয়েব ডেস্ক; ১৮ অক্টোবর : আমাদের দেশে ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৩০ শতাংশই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। এবছরে (২০২৫) দেশে নতুন করে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৩০,০০০। এর মধ্যে এরাজ্যে সংখ্যাটা ১৫,০০০ এরও বেশি। সবথেকে চিন্তার বিষয় হল এঁদের মধ্যে বেশিরভাগের ক্যানসার ধরা পড়েছে অ্যাডভান্স স্টেজে। এখানে উল্লেখ্য এদেশে ক্যানসার রোগীদের গড় বয়স পাশ্চাত্যের থেকে প্রায় দশ বছর কম, এঁদের বেশির ভাগেরই তাঁদের সাংসারিক বা কর্ম জীবনে থাকতেই ক্যানসার ধরা পড়ে। ওদেশে ৬০ থেকে ৭৪ বছরে স্তন ক্যনসার আক্রান্ত হবার ঘটনা বেশি। সেই তুলনায় আমাদের দেশে ৫০ বছরের নিচেই স্তন ক্যানসার হচ্ছে। এজন্য দরকার সচেতনতা। অক্টোবর মাসে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস। ১৯৮৫ সালে বিশ্বজুড়ে মহিলাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্যোগে ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস নিয়ে কাজ শুরু হয়।
এই বিষয়টিকে মনে রেখে ডিশান হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্যানসার স্পেশালিটি ক্লিনিক চালু হল। আক্রান্ত স্তনকে যতদুর সম্ভব অক্ষুন্ন রেখে আধুনিক পদ্ধতিতে ব্রেস্ট কনসারভেশন সার্জারি করা এই ক্লিনিকের অন্যতম লক্ষ্য। এই পদ্ধতির অস্তোপচারে রোগীর ক্যানসার মুক্তির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসে। আপাতত প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবারে ডিসান হাসপাতালে এই ক্লিনিক চালু থাকবে।
এই উপলক্ষ্যে কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ডা. শ্রেয়া মল্লিক, কন্সাল্টেন্ট মেডিক্যাল অংকোলজিস্ট, ডিসান হাসপাতাল বলেন যে টারগেটেড থেরাপি, প্রিসিসান কেমোথেরাপি ও অপারেশনের পরে পোস্টঅপারেটিভ রেডিও থেরাপির সহ ব্রেস্ট কনভেশন সার্জারিকে অনেক মহিলা ক্যানসার রোগীই নিরাপদ ও কার্যকরী চিকিৎসা হিসাবে বেছে নেন। ডিসান হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টিউমার বোর্ড প্রত্যেক ক্যানসার রোগীর জন্য ষ্টেজ ও অবস্থা পর্যালোচনা করে পৃথক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে।
ডিসান হাসপাতালের ও ব্রেস্ট সার্জারি স্পেশালিস্ট ডা. জ্যোতি গুপ্ত জানান ‘একই সঙ্গে ক্যানসারকে নির্মুল করে স্তনের স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে আমরা অ্যাডভান্স ইমেজিং ও সার্জিক্যাল প্ল্যানিংএর উপরে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একজন মহিলা ক্যানসার রোগীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ, সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
হাসপাতালের অপর একজন কন্সাল্টেন্ট ক্যানসার সার্জন ডা. আমন প্রকাশ তাঁর বক্তব্যে বলেন যে প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসায় পোস্টঅপারেটিভ রেডিও থেরাপির সহ ব্রেস্ট কনভেশন সার্জারির সাফল্যের হার ম্যাস্টেক্টটমি বা সম্পুর্ন স্তন বাদ দিয়ে করা চিকিৎসার সমান। শুধু ক্যানসার থেকে মুক্তিই নয়, একজন মহিলার স্বাভাবিকতা ও শারীরিক গঠন বজায় রাখতে তাঁরা যতদুর সম্ভব চেষ্টা করে থাকেন।
ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসার মনোবিজ্ঞানগত দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কন্সাল্টেন্ট সাইকোলজিস্ট অনুশীলা দত্ত জানান যে ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসায় শারীরিক রোগ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠাও অত্যন্ত জরুরী। এবিষয়ে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং ভয় থেকে মুক্তি পেতে, নিজের ব্যাক্তিত্ত্ব পুনরুদ্ধার করতে ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজল দত্ত বলেন ডিসানে তাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মা্নবিকতা ও সহানুভুতির সঙ্গে ব্যবহার করে থাকেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন তাঁদের নতুন ব্রেস্ট ক্যানসার ক্লিনিকও সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখে মহিলাদের চিকিৎসার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেবে।
0 Comments