কলকাতা, 15 সেপ্টেম্বর : হাওড়ার এক ৩২ বছর বয়সী গর্ভবতী মহিলা, যিনি তাঁর চতুর্থ গর্ভাবস্থায় (৩৫ সপ্তাহের বেশি) ছিলেন, হঠাৎ শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ১ সেপ্টেম্বর মনিপাল হাসপাতাল সল্টলেকে ভর্তি হন। এর আগে তাঁর তিনটি প্রসবই জটিলতা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছিল। মনিপাল হাসপাতাল সল্টলেক, মনিপাল হাসপাতালস নেটওয়ার্কের একটি ইউনিট, যা ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। রোগিনীকে ভর্তি নেওয়া হয় ডাঃ নন্দিনী চক্রবর্তী, কনসালট্যান্ট অবসটেট্রিশিয়ান, মনিপাল হাসপাতাল সল্টলেক-এর তত্ত্বাবধানে।
ভর্তির সময় রোগিনীর অবস্থা সংকটজনক ছিল। তাঁর টিউবারকিউলার পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন-এর ইতিহাস ছিল—একটি বিরল অবস্থা যেখানে যক্ষ্মা সংক্রমণের কারণে হৃদয়ের চারপাশে তরল জমে যায় এবং হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে তিনি ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং চলতি বছরের ৮ আগস্ট থেকে অ্যান্টি-টিউবারকিউলোসিস চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তাঁর হার্ট স্বাভাবিক শক্তির মাত্র ৩০% ক্ষমতায় রক্ত পাম্প করছে এবং হৃদপেশির সামগ্রিক নড়াচড়া মারাত্মকভাবে কমে গেছে। একই সঙ্গে প্রসূতি পরীক্ষায় ভ্রূণের বৃদ্ধির গুরুতর সীমাবদ্ধতা এবং ভ্রূণ-সংকট শনাক্ত হয়।
অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে অবসটেট্রিকস, কার্ডিয়োলজি, গাইনিকোলজি এবং অ্যানেস্থেসিয়োলজি বিভাগের সমন্বয়ে একটি বহুবিভাগীয় মেডিকেল টিম দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। রোগিনীকে স্থিতিশীল করার জন্য তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি সিজারিয়ান সেকশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচার অত্যন্ত দ্রুত ও পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করা হয়। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়ার অধীনে জরুরি লোয়ার সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশন (এলএসসিএস) করা হয় এবং ২.১ কেজি ওজনের এক শিশুর জন্ম হয়।
নবজাতককে সঙ্গে সঙ্গে নিওনাটোলজি টিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অ্যামনিওটিক তরল সবুজাভ হওয়ায় শিশুটি সংকটে ছিল বলে বোঝা যায়। জন্মের পরই শিশুকে পুনর্জীবন (রিসাসিটেশন) ও ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয় এবং তাকে এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়, যেখানে রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (আরডিএস) ধরা পড়ে। তবে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে দ্রুত উন্নতি হয় এবং দ্বিতীয় দিনেই শিশুর ভেন্টিলেশন সাপোর্ট বন্ধ করা সম্ভব হয়।
মায়ের চিকিৎসা ছিল আরও জটিল। হৃদযন্ত্রের অবনতি ঠেকাতে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে রাতভর ইনটিউবেশনে রাখা হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় তরল সীমিতকরণ ও লবণ নিয়ন্ত্রিত খাদ্য। পরের দিন সফলভাবে এক্সটিউবেশন করা হয়। মা ও শিশু উভয়ের অবস্থাই ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়। ষষ্ঠ দিনে তারা সম্পূর্ণ সুস্থতার পথে ফেরেন এবং ভর্তি হওয়ার দশম দিনে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
এই কেস পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন ডাঃ নন্দিনী চক্রবর্তী, কনসালট্যান্ট অবসটেট্রিশিয়ান, মনিপাল হাসপাতাল সল্টলেক। তিনি বলেন, “এই কেস অত্যন্ত জটিল ছিল কারণ মা একদিকে বিরল টিবি-জনিত হৃদরোগের সঙ্গে লড়াই করছিলেন এবং অন্যদিকে ভ্রূণের অবস্থাও ছিল সংকটজনক। সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অবসটেট্রিকস, কার্ডিয়োলজি, অ্যানেস্থেসিয়োলজি এবং নিওনাটোলজি বিভাগের নিখুঁত সমন্বয় আমাদের মাকে স্থিতিশীল করতে, শিশুকে নিরাপদে প্রসব করাতে এবং দু’জনেরই প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছে।”
0 Comments