মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাসে চালু ‘MAHI’—প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেসের নতুন উদ্যোগ



কলকাতা, ২০ ডিসেম্বর : মণিপাল হাসপাতাল কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নতুন রিটেল-কেন্দ্রিক প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম ‘MAHI (Manipal Hospitals Healthy India)’-এর সূচনা ঘোষণা করল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতি বর্তমান সময়ে ওয়েলনেস ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে।
MAHI-কে মণিপাল হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ, নির্ভরযোগ্য ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেস সঙ্গী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজ, সুলভ ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। একটি মানবিক ও সহজবোধ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কনজিউমার-ফেসিং দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে MAHI ব্যক্তি ও পরিবারকে তাদের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যযাত্রায় সহায়তা করবে—স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য থেকে শুরু করে টিকাকরণ এবং তার মধ্যবর্তী সমস্ত পরিষেবা পর্যন্ত।

MAHI-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি মানুষ আলাদা—এই উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে MAHI নিয়ে এসেছে কাস্টমাইজড হেলথ চেক প্যাকেজ। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রোফাইল-ভিত্তিক প্যাকেজ: কিশোর-কিশোরী, পুরুষ, মহিলা, সিনিয়র ও সুপার সিনিয়রদের জন্য
রোগ-ভিত্তিক প্যাকেজ: ডায়াবেটিস, PCOS, থাইরয়েড সমস্যা, কার্ডিয়াক রিস্ক ও ক্যান্সার মার্কার
অঙ্গ-ভিত্তিক প্যাকেজ: হার্ট, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, চোখ, থাইরয়েড ও হাড়ের স্বাস্থ্য
জীবনের বিভিন্ন পর্যায় ও স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই পরিষেবাগুলি ধাপে ধাপে চালু করা হচ্ছে।

মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস MAHI-এর অধীনে উপলব্ধ বিস্তৃত পরিষেবার কথা তুলে ধরে একে একটি সমন্বিত প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তৈরি। MAHI-এর মধ্যে রয়েছে—MAHI Check (নির্বাচিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্যাকেজ), MAHI Doc (২৪×৭ ডাক্তারি পরামর্শ) এবং MAHI Shots (প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রতিরোধমূলক টিকাকরণ)। এর ফলে রুটিন স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সময়মতো টিকাকরণ পর্যন্ত একটি নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবার ধারাবাহিকতা তৈরি হয়। ওয়েবসাইট, অ্যাপ এবং হাসপাতাল ও কমিউনিটিতে সহায়তাপ্রাপ্ত চ্যানেলের মাধ্যমে সহজে উপলব্ধ MAHI ব্যক্তি ও পরিবারকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় থাকার একটি সহজ ও আকর্ষণীয় উপায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরা জানান, ভারতে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার দিকে দ্রুত ঝোঁক বাড়ছে। ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যবাজারের আকার ₹১৬,০০০ কোটিরও বেশি হবে, যেখানে বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) প্রায় ২২ শতাংশ। একই সঙ্গে, শুধুমাত্র হেলথ চেক-আপ বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ₹১০,০০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান। কোভিড-পরবর্তী সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিরোধমূলক যত্নের দিকে মানুষের ঝোঁক বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যসচেতনতা বেড়েছে ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ভারতে এখনও ২৭ কোটিরও বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত বা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যা আগাম স্ক্রিনিং ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে।

চিকিৎসকেরা আরও বলেন, মানুষ নতুন বছরে জিমে যাওয়া বা ডায়েট পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নিলেও বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ এখনও পর্যাপ্তভাবে গ্রহণ করা হয় না—এর প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব, খরচ সম্পর্কে ভুল ধারণা ও মানসিক অনীহা। MAHI এই বাধাগুলি ভেঙে “অসুস্থ হলে চিকিৎসা” মনোভাব থেকে “ভাল থাকতে চাই” ওয়েলনেস চিন্তাধারার দিকে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পরিকল্পিত। 

ডা. কুণাল সরকার, ডিরেক্টর ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট – কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক সার্জারি, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস বলেন, “প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাই আজ আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ঝুঁকি শনাক্তকরণ ও জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতা বহু গুরুতর হৃদরোগ ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা আগেই প্রতিরোধ করতে পারে। MAHI-এর মতো প্ল্যাটফর্ম রোগের চিকিৎসার বদলে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মানুষকে সচেতন ও সক্ষম করে তোলে।”

ডা. বিকাশ কাপুর, ক্লাস্টার ডিরেক্টর, অর্থোপেডিক্স, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস ও মুকুন্দপুর বলেন, “হাড় ও জয়েন্টের ক্ষেত্রেও প্রতিরোধমূলক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্টিওপোরোসিস বা জয়েন্ট ক্ষয়ের মতো সমস্যা অনেক সময় নিঃশব্দে বাড়তে থাকে। MAHI-এর মাধ্যমে আগাম স্ক্রিনিং ও সময়মতো পরামর্শ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।”

ডা. দেবরাজ যশ, বিভাগীয় প্রধান – পালমোনোলজি (রেসপিরেটরি ও স্লিপ মেডিসিন), মণিপাল হাসপাতালস বলেন, “শ্বাসযন্ত্র ও ঘুমের সমস্যা অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে। নিয়মিত পরীক্ষা ও আগাম মূল্যায়ন দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে। MAHI প্রতিরোধমূলক শ্বাসযন্ত্রের যত্ন মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে।”

ডা. তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাসবলেন, “আমরা প্রায়ই এমন রোগীদের দেখি, যাদের অসুখ শুরুতেই ধরা পড়লে এত গুরুতর হতো না। MAHI মানুষকে আগেভাগে সচেতন হতে সাহায্য করবে।”

ডা. অম্লান মণ্ডল, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নিউরোলজি, মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুর বলেন,
“নিউরোলজিক্যাল সমস্যার অনেকটাই ধীরে ধীরে তৈরি হয়। আগাম পরীক্ষা ও পরামর্শ রোগের অগ্রগতি ধীর করতে পারে। MAHI এই ব্যবধান কমাতে সাহায্য করবে।”

ডা. ইন্দ্রনীল দাস, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, এমার্জেন্সি মেডিসিন, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস বলেন,
“জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়াই জীবন বাঁচায়। সচেতনতা ও প্রাথমিক প্রশিক্ষণও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
ডা. সৌভিক রায় চৌধুরী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ENT, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস বলেন,
“শ্রবণ, সাইনাস বা গলার সমস্যা অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে। MAHI মানুষকে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।”

ডা. শাশ্বতী সেনগুপ্ত দত্ত, কনসালট্যান্ট ENT, মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাস বলেন,
“আগাম মূল্যায়ন ও চিকিৎসা ভবিষ্যতের জটিলতা কমাতে পারে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্তব্য করতে গিয়ে ডা. আয়ানভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার (পূর্ব), মণিপাল হাসপাতালস বলেন, “MAHI-এর মাধ্যমে মণিপাল হাসপাতালস ইস্ট প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজ ও ব্যক্তিগত করে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে অসুস্থতার অপেক্ষা না করে আগেভাগেই নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করা।”

Post a Comment

0 Comments