দুর্গাপুজোর প্রাণ কুমোরটুলি—প্রতিমাশিল্পীদের শ্রদ্ধা, যত্ন ও স্বাস্থ্যরক্ষায় এক অভিনব অধ্যায় শুরু করল মনিপাল হসপিটালস




ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ৩ সেপ্টেম্বর : যখন গোটা বাংলা মেতে উঠেছে দুর্গা মায়ের আগমনী সান্ধ্য আলোয়, সেই দেবীকে যাঁরা প্রাণ দেন, সেই শিল্পীদের জন্য এক অভিনব পদক্ষেপ নিল মনিপাল হসপিটালস কলকাতা। এক বিশেষ অনুষ্ঠানে কুমারটুলির প্রতিমাশিল্পীদের সম্মান জানাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তাঁদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে আলোচনা করল এবং তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার দিলো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মণিপাল হসপিটালস ইস্ট, সঙ্গে ছিলেন ডা. কুনাল সরকার, ডা. বিকাশ কাপুর, ডা. শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. সৌরভ দত্ত, ডা. পায়েল বোস, ডা. কিশেন গোয়েল, ডা. দেবরাজ জাশ, ডা. সুজিত চৌধুরি, ডা. অঙ্শু সেন, ডা. সুরঞ্জন মুখার্জি, ডা. স্মিতা মৈত্র, ডা. সিমা দত্ত রায়, ডা. পারোমিতা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী, ডা. সৌমেন বসু, ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় ও ডা. পলি চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা সকলেই একসাথে শিল্পীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং উদ্যোগকে সমর্থন জানান। রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনস (RWA) ও প্রতিমাশিল্পী সমিতির সহযোগিতায় মণিপাল হসপিটালস কলকাতা প্রতিমাশিল্পীদের জন্য প্রিভিলেজ হেলথ কার্ড চালু করে, যাতে তাঁরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা, পরামর্শ এবং অন্যান্য সুবিধা পেতে পারেন।

অনুষ্ঠানে “প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর”—অর্থাৎ "প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা" শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। প্রতিমাশিল্পীদের কাজের প্রকৃতি ও পরিবেশজনিত কারণে যেসব স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়, সে বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ—কার্ডিওলজি, চক্ষু, শ্বাসতন্ত্র, অর্থোপেডিকস, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, নিউরোলজি ও এমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসকরা সহজ ভাষায় প্রতিরোধ ও সুরক্ষার উপায় জানালেন। শেষে ছিল এক আন্তঃক্রিয়ামূলক প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে শিল্পীরা সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা চিকিৎসকদের জানালেন।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন— “দুর্গাপুজো কোনো উৎসব নয়, এটি বাংলার হৃদয় ও আত্মা। কুমোরটুলির শিল্পীরা তাঁদের অদ্বিতীয় নিষ্ঠা দিয়ে প্রতি বছর দেবীকে প্রাণ দেন। তাঁদের এই পরিশ্রম নিছক কারিগরি নয়, এটি এক প্রকার পূজা, যা বাংলার মাটির আসল সত্তাকে প্রকাশ করে। মণিপাল হাসপাতালে আমরা তাঁদের এই আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি। তাঁরা যখন তাঁদের শিল্পের মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসকে রক্ষা করেন, তখন আমরা আমাদের দক্ষতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে তাঁদের স্বাস্থ্য রক্ষার অঙ্গীকার করি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যাঁরা আমাদের কাছে দেবী দুর্গার ঐশ্বরিক রূপ এনে দেন, তাঁরা যেন সুস্থ, শক্তিশালী এবং সম্মানিত থাকেন।”

দুর্গাপুজোর উৎসব যখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে একত্রিত করে, তখন কুমোরটুলির কারিগররা থেকে যান এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রে। তাঁরা প্রতিবছর শুধুমাত্র কলকাতায় প্রায় ৩,০০০ প্যান্ডেলের প্রতিমা গড়েন, সারা ভারতে প্রায় ৫,০০০ প্রতিমা এবং প্রায় ১০,০০০ প্রতিমা বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হয়। তাঁদের এই নিষ্ঠা ও অসাধারণ শিল্পকলা-প্রতিভাকে সম্মান জানিয়ে, মণিপাল হাসপাতাল তাদের ৪০,০০০-এর বেশি কর্মী এবং ৭,০০০ চিকিৎসকের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আবারও প্রতিশ্রুতি জানাল যে এই শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের সুরক্ষা করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মণিপাল হাসপাতাল বাংলার সাংস্কৃতিক হৃদস্পন্দনের সঙ্গে আরও এক ধাপ গভীরভাবে যুক্ত রইল, যাতে মা দুর্গার রূপদানকারী সেই হাতগুলো সবসময় শক্তিশালী ও সুস্থ থাকে।

Post a Comment

0 Comments