কলকাতা, ১৫ ডিসেম্বর : মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুর, একটি অত্যন্ত জটিল মাইক্রোসার্জিক্যাল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি সফলভাবে পুনঃস্থাপন করেছে। এই সাফল্য হাসপাতালের উন্নত জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ও সার্জিক্যাল দক্ষতার প্রমাণ বহন করে। অস্ত্রোপচারটি পরিচালনা করেন ডা. অখিলেশ কুমার আগরওয়াল, কনসালট্যান্ট – প্লাস্টিক সার্জন, মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুর, এবং তাঁর নেতৃত্বে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম।
সোনারপুরের সুভাষগ্রামের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী প্রলয় বোস মোটরবাইক পরিষ্কার করার সময় দুর্ঘটনাবশত তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাইকের চলমান চেনের উপর থাকা চেন কভারে তাঁর আঙুল আটকে যায়। এর ফলে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে গুরুতর চাপজনিত ক্ষতি হয়, যা একটি পরিষ্কার কাটের তুলনায় চিকিৎসা ও পুনর্গঠনকে অনেক বেশি জটিল করে তোলে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ দ্রুত রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাটা বৃদ্ধাঙ্গুলি সংরক্ষণ ও পরিবহনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়। তাঁদের বলা হয় আঙুলটি আলতো করে পরিষ্কার করে একটি পরিষ্কার জলরোধী ব্যাগে রাখতে এবং বরফের সরাসরি সংস্পর্শ ছাড়াই ঠান্ডা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে। এই সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলি বিচ্ছিন্ন আঙুলটির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সার্জিক্যাল টিমকে সর্বোত্তম অবস্থায় পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করতে সক্ষম করে। দুর্ঘটনার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই তিনি হাসপাতালে পৌঁছান, যা মাইক্রোসার্জারির সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা।
অস্ত্রোপচারের সময় ডা. অখিলেশ কুমার আগরওয়াল ও তাঁর টিম, অত্যন্ত সূক্ষ্ম সুতোর সাহায্যে হাড়, ধমনী, শিরা, স্নায়ু ও টেন্ডনগুলি সতর্কতার সঙ্গে জোড়া লাগান এবং হাড়ের সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে একটি কে-ওয়্যার (সাময়িক পিন) ব্যবহার করে সেটিকে স্থিতিশীল করেন।
এই চিকিৎসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. অখিলেশ কুমার আগরওয়াল বলেন, “রোগী ভোঁতা ও চূর্ণজনিত আঘাতের কারণে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে আমাদের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন, যা পুনঃস্থাপনকে অত্যন্ত জটিল করে তোলে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থিতিশীল করি এবং অস্ত্রোপচার শুরু করি। মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ধমনী, শিরা, স্নায়ু ও টেন্ডন জোড়া লাগানো হয় এবং কে-ওয়্যারের মাধ্যমে হাড় স্থির করা হয়। রক্ত সরবরাহ বজায় রাখা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং আমরা আনন্দিত যে বৃদ্ধাঙ্গুলিটি সফলভাবে বেঁচে রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই এটি ব্যবহার শুরু করেছেন, ফিজিওথেরাপি চলছে, এবং সময়ের সঙ্গে তিনি খুব ভালো কার্যক্ষমতা ফিরে পাবেন বলে আমি আশাবাদী।”
নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে প্রলয় বোস বলেন, “আমি খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে আসি। হাসপাতালের টিম আমার কাটা আঙুলটি কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে তা বুঝিয়ে দেয়, আর আমার বন্ধুরা ঠিক সময়ের মধ্যেই সেটি নিয়ে আসে—আমার বিশ্বাস, সেটাই আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। চিকিৎসকদের আশ্বাস ও যত্নের জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমি আমার সুস্থতা নিয়ে আশাবাদী এবং নিয়মিত ফলো-আপ করছি। আমি সবসময় বাইকের প্রতি ভীষণ আগ্রহী ছিলাম, আর আবার সেগুলোর কাছে ফিরতে পারব—এই ভাবনাটাই আমার কাছে অনেক মূল্যবান।”
0 Comments