ওয়েব ডেস্ক; ২৩ মে : দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে আসা মাত্র ন’মাস বয়সী এক কন্যাশিশু সম্প্রতি এক অত্যন্ত দুর্লভ ও জীবনরক্ষাকারী কার্ডিয়াক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল (মণিপাল হাসপাতাল নেটওয়ার্কের অন্তর্গত) -এ। এই অসাধ্যকে সম্ভব করে তুলেছেন হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডঃ অনিল কুমার সিংহি, একটি বহু-বিভাগীয় চিকিৎসক দল - অ্যানাস্থেশিয়া, কার্ডিওলজি, পেডিয়াট্রিক্স এবং সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতায়। আশু বিপদের জন্য সিটিভিএস সার্জিকাল টিমও প্রস্তুত ছিলেন।
এই চিকিৎসা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 'শিশু সাথী' প্রকল্পের আওতায় সম্পন্ন হয় — এই প্রকল্পের অধীনে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষিজীবী পরিবারের এই শিশুর জন্য এই উন্নত চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব ছিল না।
শিশুটির নাম পরিবর্তন করে "অনন্যা" রাখা হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে জন্মের পর থেকেই অনন্যার শ্বাসকষ্ট ও ওজন না বাড়ার সমস্যা ছিল। ওষুধ খাওয়ানোর পরও উন্নতি না হওয়ায় বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। চার মাস বয়সে তাঁর জটিল জন্মগত হৃদরোগ ধরা পড়ে।
তাঁকে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে ডঃ অনিল কুমার সিংহির নেতৃত্বে পেডিয়াট্রিক ও কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ দলের দ্বারা করা বিশদ মূল্যায়নে ধরা পড়ে একটি "অর্টোপালমোনারি উইন্ডো" নামক দুর্লভ ও গুরুতর হৃদরোগ। এটি হৃদয়ের দুই প্রধান ধমনী — অর্টা ও পালমোনারি আর্টারির মধ্যে অস্বাভাবিক সংযোগ তৈরি করে, যার ফলে ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে চার গুণ বেশি রক্ত প্রবাহ হচ্ছিল, এবং শিশুটির হৃদযন্ত্র ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ছিল।
ডঃ সিংহি বলেন, “সাধারণত এই ধরণের ত্রুটি ছয় মাস বয়সের আগেই ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে সারানো হয়। কিন্তু অনন্যার বয়স তখন নয় মাস, ফলে ফুসফুসে ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল প্রবল। আমরা মেডিকায় কম ইনভেসিভ ট্রান্সক্যাথেটার ক্লোজার পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিই। শিশুটির পায়ের সরু রক্তনালী দিয়ে একটি ক্লোজার ডিভাইস ঢুকিয়ে হৃদয়ের ত্রুটি বন্ধ করি — সম্পূর্ণভাবে সেডেশন ও লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ায়। প্রথম প্রয়াস ব্যর্থ হলেও, দ্বিতীয় চেষ্টায় আমরা সফল হই। ডিভাইসটি নিখুঁতভাবে স্থাপন হয় এবং মুহূর্তের মধ্যেই ফুসফুসের রক্তচাপ কমে যায়।”তিনি আরও যোগ করেন, “এত ছোট শিশুতে এত বড় একটি হৃদরোগ অপারেশন ছাড়াই সারানো চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত বিরল। দ্রুত আরোগ্যই প্রমাণ করে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ চিকিৎসক দল কীভাবে একে সম্ভব করে তুলতে পারে।”
এই কার্ডিয়াক প্রক্রিয়া ১৪ মে সম্পন্ন হয়। অনন্যাকে আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয় এবং পরদিনই সুস্থ, হাসিখুশি ও স্বাভাবিকভাবে খেতে পারা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয় — যা আধুনিক, মৃদু-হস্তক্ষেপকারী কার্ডিয়াক কেয়ারের বাস্তব উদাহরণ।
অনন্যার মা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ও কিছু খেত না, বাড়ত না, সারাক্ষণ হাঁপাত। সার্জারির জন্য আমাদের কাছে টাকা ছিল না। কিন্তু মেডিকার ডাক্তাররা ওকে নিজেদের মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন। ও আজ বাঁচল, হাঁসছে — এটা শুধু চিকিৎসকদের এবং সরকারের সহযোগিতার জন্যই সম্ভব হয়েছে।”
0 Comments