"বাংলার বীজ- কৃষির বীজ”: কৃষিভিত্তিক প্রকৃতি সহায়ক চাষ ও বীজ স্বরাজের পথে পশ্চিমবঙ্গের আহ্বান




ওয়েব ডেস্ক; ২৩ জুন : কর্পোরেট নির্ভর কৃষির বিকল্প খুঁজতে এবং প্রাকৃতিক ও কৃষিবান্ধব চাষের জন্য সম্প্রদায়-ভিত্তিক বীজ ব্যবস্থার উপর এক রাজ্যস্তরীয় পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয় কলকাতায়। ওয়াসান, আরআরএ নেটওয়ার্ক এবং ডিআরসিএসসি-র সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশনেন রাজ্যের কৃষিগবেষক, সমাজকর্মী, বীজরক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা।

মূল ভাষণে প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমাদের নিজস্ব বীজ তৈরি করতে হবে। কর্পোরেট বীজের উপরে নির্ভরশীলতা বিপজ্জনক।” তিনি কেরল ও ওড়িশার জৈব কৃষি গ্রহণের অভিজ্ঞতার প্রশংসা করে বাংলা তেও তেমন উদ্যোগের ডাক দেন এবং গ্রাসরুট স্তরের এনজিওদের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

ওয়াসান-এর ডিরেক্টর ড. সব্যসাচী দাস আলোচনার সূচনা করেন রাজ্যের কৃষি বৈচিত্র্য ও পুষ্টিকর খাদ্যের নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে। তিনি বলেন, শুধু ফলনের ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা নয়, বরং পুষ্টি ও পরিবেশগত টেকসইতাও জরুরি। ওডিশায় ঐতিহ্যবাহী মিলেটের পুনর্জাগরণে WASSAN-এর অভিজ্ঞতা ভাগ করে তিনি জানান, এমন উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গেও নেওয়া দরকার। তিনি জানান, রাজ্য সরকার ন্যাচারাল ফার্মিং-এর জাতীয় মিশন (এনএমএনএফ)-এর আওতায় ১০ জেলা, ৯৯ ব্লক ও ৩০০ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্প চালু করতে চলেছে — যার ভিত্তি হতে পারে এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী বীজ চিহ্নিত করণ ও সংরক্ষণ।

অন্যান্য বক্তারা, যেমন প্রফেসর কৌশিক ব্রহ্মচারী (বিসিকেভি), ড. অনুপম পাল (পূর্বতন ডেপুটি ডিরেক্টর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার), ড. সুখান্ত দাসগুপ্ত (জেআইএস ইউনিভার্সিটি) ও শ্রী অমলেশ মিশ্র (প্রাক্তন অধ্যাপক, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) বীজ আইনি সংস্কার, কৃষক গোষ্ঠীর ভূমিকা ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রায় ৬০০টি ঐতিহ্যবাহী বীজের প্রদর্শনী, যা দশটি অংশগ্রহণকারী এনজিও নিয়ে এসেছিলেন। এই প্রদর্শনী তুলে ধরেছে গ্রামের মানুষ কী ভাবে নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ ও কৃষিগত ঐতিহ্য বাঁচিয়ে চলেছেন।

দ্বিতীয় দিনটি ছিল পুরোপুরি মাঠপর্যায় থেকে আগত এনজিওদের উপস্থাপনা কে কেন্দ্র করে, যারা বিলুপ্ত প্রায় বীজ সংগ্রহ ও নথিভুক্তিকরণের কাজ করেছেন। উল্লেখযোগ্য ছিল কামিনিভোগ ও রাধুনির মতো ধান, দেশি বেগুন, ধুকুর, কামরাঙা শিমের মতো সবজি এবং খেসারির মতো ডালের পরিচিতি। এই কার্যক্রম বিলুপ্তপ্রায় জার্মপ্লাজম রক্ষার তীব্র প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

সমাপ্তি ভাষণে ড. সব্যসাচী দাস ‘বীজ মঞ্চ’-এর সূচনা করেন এবং সমস্ত অংশীদারদের এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে কৃষক-নেতৃত্বাধীন বীজ ব্যবস্থা কে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

এই দুই দিনের আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় শেষে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি এনজিও কে সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Post a Comment

0 Comments