ওয়েব ডেস্ক; ৪ জুন ; কলকাতা: ১৯ মাস বয়সী এক শিশু, আগস্ত্য, মুকুন্দপুরের মনিপাল হাসপাতালে চৌম্বক বোতাম ব্যাটারি গিলে ফেলার পর সফলভাবে চিকিৎসা লাভ করেছে। ব্যাটারিটি তার পেটের মধ্যে আটকে গিয়েছিল এবং গুরুতর ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ডাঃ শুভাশিস সাহা, কনসালট্যান্ট – পেডিয়াট্রিক সার্জন, ল্যাপারোস্কোপিক (কি-হোল) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই জটিল সার্জারিটি সম্পন্ন করেন, যার ফলে শিশুটির শরীরে কোনো দৃশ্যমান দাগ ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে।
২০২৫ সালের ২ মে, আগস্ত্যকে সবুজ বমি এবং পেটব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়। এক্স-রেতে দেখা যায়, তার পেটে একটি বস্তু রয়েছে। সেই রাতেই এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে তা বের করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ব্যাটারিটি পেটের দেয়ালে গভীরভাবে আটকে যাওয়ায় নিরাপদে তোলা সম্ভব হয়নি।
৩ মে সকালে, ডাঃ শুভাশিস সাহা ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ব্যাটারিটি অপসারণ করেন। ছোট ছোট কাটের মাধ্যমে পেট খুলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটারিটি বের করা হয়, যাতে অন্যান্য অঙ্গের কোনো ক্ষতি না হয়। একই প্রযুক্তিতে পেট সেলাই করা হয়। উন্নত প্রযুক্তির জন্য শিশুটির শরীরে কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন পড়েনি এবং তিন দিনের মধ্যেই সে আবার খাওয়া শুরু করে। পরে তাকে সুস্থ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি নিয়ে ডাঃ শুভাশিস সাহা বলেন, “চৌম্বক বোতাম ব্যাটারি শিশুদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এগুলো খুব দ্রুত পেট বা অন্ত্রের আস্তরণ ক্ষয় করে, ফলে ফুটো হয়ে যেতে পারে, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে বা প্রাণঘাতী সংক্রমণও ঘটতে পারে। আগস্ত্যর ক্ষেত্রে সময় ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাটারিটি পেটের দেয়ালে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। এন্ডোস্কোপি ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা তৎক্ষণাৎ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির সিদ্ধান্ত নিই। সৌভাগ্যবশত, এই মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতিতে আমরা ব্যাটারিটি নির্ভুলভাবে অপসারণ করতে পারি, কোনো অঙ্গের ক্ষতি ছাড়াই। ক্ষতবিহীন এই সার্জারির ফলে শিশুটি দ্রুত আরাম পেয়েছে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। এই ঘটনা সব অভিভাবকদের জন্য একটি বড় শিক্ষা—ছোট ছোট বস্তু, যেমন ব্যাটারি, চৌম্বক, খেলনার অংশ ইত্যাদি অনেক সময় অদৃশ্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সচেতনতা ও প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। আমরা কৃতজ্ঞ যে আগস্ত্য সুস্থ আছে এবং তার বাবা-মা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ওপর আস্থা রেখেছেন।”
আগস্ত্যর বাবা, ইএম বাইপাস সংলগ্ন সার্ভে পার্কের বাসিন্দা এবং এক বিপণন পেশাজীবী মিঃ বিনয় জানান, “আগস্ত্য ছোট ছোট চৌম্বক ব্যাটারিযুক্ত খেলনায় খেলতে ভালোবাসত। আমাদের অজান্তেই একটিতে থাকা ব্যাটারিটি খুলে পড়ে এবং সেটা সে গিলে ফেলে। ৩০ এপ্রিল হঠাৎ সে বমি করতে শুরু করে। ১ মে এক ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ফের বমি শুরু হয়—তখনই আমরা ভয় পেয়ে যাই। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ডাঃ জেমসি জোসকে ফোন করি, যিনি মনিপাল হাসপাতাল, মুকুন্দপুর-এর কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান এবং আগস্ত্যর চিকিৎসক। তার পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত মুকুন্দপুর ইউনিটে নিয়ে যাই, যেখানে পুরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ডাঃ জেমসি জোস এবং ডাঃ শুভাশিস সাহার তৎপরতা, দক্ষতা এবং যত্নশীল আচরণ আমাদের কাছে এক আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিল। তাঁদের সময়মতো হস্তক্ষেপে আগস্ত্যর প্রাণ বেঁচেছে। আমাদের পক্ষে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা। আমরা কখনও ভাবিনি একটি ছোট ব্যাটারি এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। মনিপাল হাসপাতালের অসাধারণ চিকিৎসক দলের জন্যই আজ আগস্ত্য সুস্থ। আমাদের কৃতজ্ঞতা চিরকাল তাদের সঙ্গে থাকবে।”
এই প্রসঙ্গে ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল সিওও – মনিপাল হাসপাতালস (পূর্ব), বলেন, “এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে মুকুন্দপুরের মনিপাল হাসপাতালের চিকিৎসক দল কত দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে জরুরি অবস্থায় সাড়া দিতে সক্ষম। সময়মতো হস্তক্ষেপের ফলে শিশুটি জটিলতা ছাড়াই সেরে উঠেছে। এই ঘটনাটি অভিভাবকদের সচেতন করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ—বাড়ির ছোট ছোট বস্তু অনেক সময় শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সামান্য সচেতনতা অনেক বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারে।”
0 Comments